রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ অপরাহ্ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক : এশিয়া কাপ ফাইনালে মাত্র ৮৭ বলে সেঞ্চুরি তাঁর। ভারতের বিপক্ষে ১১৭ বলে ১২১ রানের ইনিংসটি বিস্ময় জাগাবে আরো অনেক কাল। পরপরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৮৩ রানের একটি ইনিংস রয়েছে। এমন পারফরম্যান্সের পর লিটন দাশ নিশ্চয়ই ভাবছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ওপেনিংয়ে থাকবেন না।
সেটি আরো অচিন্তনীয় ইমরুল কায়েসের জন্য। জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে সিরিজে ১৪৪, ৯০ ও ১১৫ রানের ইনিংসগুলোর পর। তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি এবং আরেকটি ‘প্রায় সেঞ্চুরি’—বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানই এমন ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি কোনোকালে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে পরের সিরিজে তাহলে তাঁর ওপেনিংয়ে না থাকার কারণ নেই কোনো।
ওদিকে ইনজুরি থেকে তামিম ইকবাল যে ফিরেছেন! বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যানকে একাদশের বাইরে রাখার প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে? লিটন-ইমরুলের অমন পারফরম্যান্সের পরও প্রশ্নটি এসে ঠেকেছে তাই ভিন্ন জায়গায়—ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী হবেন কে?
তিন নম্বর পজিশন নিয়েও একই অবস্থা। তামিমের সঙ্গীকে যেমন আতিপাতি করে খোঁজা হচ্ছিল অনেক দিন, তেমনি তিন নম্বর ব্যাটসম্যানও। বছরে শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজে অবশেষে সাকিব আল হাসানকে ব্যাটিং পজিশনে ওপরে তুলে রক্ষা। ওই সিরিজে ৩৭, ৬৭, ৫১, ৮ রানের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৭, ৫৬, ৩৭ রানে দেন আস্থার প্রতিদান। এশিয়া কাপে তিন নম্বরে খেলা তিন ম্যাচে তেমন রান না পেলেও (০, ৩২, ১৭) ওখানে অন্য কারো কথা ভাবেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তাঁদের ভাবনার জানালায় টোকা পড়ে সৌম্য সরকারের ফর্মে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে হুট করে ডাক পেয়েই তিন নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি; এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও তিন অঙ্ক ছোঁয়া ইনিংস। সাকিবকে আবার ব্যাটিং অর্ডারে পেছনে ঠেলে তিনে সৌম্যকে খেলানোর সম্ভাবনা উসকে ওঠে তাতেই।
অর্থাৎ, তামিমের সঙ্গী দ্বিতীয় ওপেনার এবং তিন নম্বরের সমস্যা-কণ্টকিত দুটি পজিশনে এখন ফুলের সৌরভ। লিটন-ইমরুল-সৌম্য-সাকিব, কোন ফুল রেখে কোন ফুল ধরি অবস্থা। টপ অর্ডার নিয়ে এমন মধুর সমস্যায় কবে পড়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট!
এমন ‘সমস্যা’য় কোচ স্টিভ রোডস বেশ খুশি, ‘দুজন ওপেনার বেছে নেওয়া টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য খুব কঠিন সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমাদের জন্য এটি দারুণ ব্যাপার। কেননা সবাই চাইছিলাম, বাংলাদেশ দলে গভীরতা আসুক। বেশ কিছু বিকল্প ক্রিকেটার যে রয়েছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’ শেষ পর্যন্ত টপ অর্ডারে কারা খেলবে, এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান কোচ। তিনি খুশি দাবিদারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে ইমরুল ৩৪৯ রান করেছে। তামিম ফর্মে ফিরল। লিটনও খুব পিছিয়ে নেই; এশিয়া কাপ ফাইনালে সেঞ্চুরির পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আশির ঘরের ইনিংস আছে। ওই সিরিজে তিন নম্বরে নেমে সৌম্য সেঞ্চুরি করেছে; ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও তাই। এটি দারুণ স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত একাদশে কারা খেলবে, আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। কেননা এখনো আমি তা জানি না।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরশু বিকেএসপির অনুশীলন ম্যাচ টিম ম্যানজমেন্টকে ফেলেছে আরো ধন্দে। ইনজুরি কাটিয়ে আড়াই মাসের বেশি সময় পর ব্যাটিংয়ে ফেরা তামিম করেন সেঞ্চুরি। তিনে নেমে সৌম্যও তাই। ওদিকে প্রতিপক্ষের ছুড়ে দেওয়া ৩৩২ রান তাড়ায় তামিম-ইমরুলের ৮১ রানের জুটির অবদানও কম নয়। ইমরুল ২৭ রান করলেও এই ওপেনিং জুটির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন রোডস, ‘বিকেএসপির পিচটি ব্যাটিং সহায়ক আর আউটফিল্ডও খুব দ্রুতগতির। অনেক রানের ম্যাচ হওয়াটা তাই অবধারিতই ছিল। তামিম ও ইমরুল যেভাবে শুরু করেছে, তাতে আমি খুব সন্তুষ্ট। ওই শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখাতেও। সবাইকে এটি আত্মবিশ্বাস জোগাবে; কেননা ছেলেরা রান পেয়েছে।’ কোচ বেশি তৃপ্ত বোধকরি তামিমের প্রত্যাবর্তনে, ‘কয়েকজন ক্রিকেটারের জন্য এই প্রস্তুতি ম্যাচটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইনজুরি থেকে ফেরা তামিম ইকবালের জন্য যেমন। ক্রিজে ওর কিছুটা সময় কাটানো প্রয়োজন ছিল। এমনভাবে ও খেলল যেন সেরা ফর্মে আছে, যেন মাঝে কিছুদিন ক্রিকেটের বাইরে ছিল না। এটি আমাদের জন্য দারুণ ইতিবাচক দিক। কেননা আমাদের ওয়ানডে পরিকল্পনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ তামিম। সৌম্য সরকারের ব্যাটিংও দলের জন্য ইতিবাচক।’
টপ অর্ডারের এতসব ইতিবাচকতা নিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে তাদের হোয়াইটওয়াশ করার পর আত্মবিশ্বাসও চূড়ায়। কিন্তু ক্যারিবিয়ানদের দিক থেকে পাল্টা আঘাতের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রোডস। আর তা সর্বশেষ সিরিজ মাথায় রেখে আরো বেশি করে, ‘ওয়ানডে সিরিজটি খুব কঠিন হবে। জিততে হলে নিজেদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমরা সম্মান করি। আর টেস্ট সিরিজ হারের পর ওরা এখানে ভালো করার জন্য মুখিয়ে আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আমরা টেস্ট সিরিজে হারের পর (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে) ফিরেছি প্রবলভাবে। ওরাও এবার নিশ্চয়ই তাই করতে চাইবে। ক্যারিবিয়ান দলটি দুর্দান্ত; ওদের ব্যাপারে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে।’